এতিম শিশুদের খাবার বিতরণে স্টুডেন্ট'স ফর হিউম্যানিটি

আগের সংবাদ

বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে চরবাসীদের স্বপ্ন

পরের সংবাদ

লাভজনক হওয়ায় নরসিংদীতে লটকনের চাষ ও চাহিদা বাড়ছে

এস আর মাহফুজ, জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জুলাই ২০, ২০২০ , ১২:৩১ অপরাহ্ণ

লটকন মানেই নরসিংদী জেলার নাম সবার আগে আসবে কারন নরসিংদী জেলার রায়পুরা, শিবপুর, মরজাল এসব উপজেলায় সবচেয়ে বেশি লটকন হয়ে থাকে। নরসিংদীর অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে একসময়কার অপ্রচলিত ফল লটকন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে রফতানি হওয়ায় অর্থনৈতিক গুরুত্ব বেড়েছে লটকনের। অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ায় লটকন চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের।

চলতি মৌসুমে এক হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে ২৭ হাজার ৯শ’ মেট্রিক টন লকটনের ফলন পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী চাষী কল্যান সমিতি। উৎপাদিত এ লটকন বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা। স্থানীয় কৃষক ও কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৩০ বছর আগে প্রথম বেলাবো উপজেলার লাখপুর গ্রামে অপ্রচলিত ফল লটকনের আবাদ শুরু হয়। এরপর থেকে বেলাব ও শিবপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের লালমাটির এলাকায় লটকন চাষের প্রসার ঘটতে থাকে। দিন দিন মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে খাদ্য ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ লটকনের চাহিদা বাড়তে থাকে বাজারে। বাজারে ব্যাপক চাহিদা ও লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই লটকনের চাষ বাড়ছে। বিশেষ করে বেলাব ও শিবপুর উপজেলায় গত ৩০ বছরে বাণিজ্যিকভাবে লটকনের প্রসার ঘটেছে। দুই উপজেলার প্রায় প্রতিটি পরিবারের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি এখন লটকন। লটকন চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘোরানোর পাশাপাশি বেকার সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে পেয়েছেন অনেকে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, শিবপুর ও বেলাবো উপজেলার লাল রঙের উঁচু মাটিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও খনিজ উপাদান বিদ্যমান থাকায় এখানকার মাটি ও আবহাওয়া লটকন চাষের জন্য খুবই উপযোগী।

এছাড়া রায়পুরা ও মনোহরদী উপজেলার কিছু কিছু এলাকার মাটিও লটকন চাষের উপযোগী। গাছের গোড়া থেকে শুরু করে প্রধান কাণ্ডগুলোতে ছড়ায় ছড়ায় ফলন হয় এই লটকনের। নরসিংদীর লটকন খেতে সুস্বাদু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলায় কদর বেড়েছে। ২০০৮ সাল থেকে দেশের চাহিদা মিটিয়ে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয় নরসিংদীর লটকন। মৌসুমী এ ফলের বেচাকেনাকে ঘিরে জেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রায়পুরার মরজাল ও শিবপুর উপজেলা সদরে বসছে লটকনের বাজার। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারি ক্রেতারা এসে এসব বাজার থেকে লটকন কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। পর্যায়ক্রমে হাত বদল হয়ে রাজধানী ঢাকা থেকে এসব লটকন রফতানি হচ্ছে বিদেশের বাজারেও। অনেকে সরাসরি জমি থেকে লটকন কিনে সরবরাহ করছেন দেশ-বিদেশের বাজারে।

শিবপুর উপজেলার জয়নগর গ্রামের ফরিদ মাষ্টার বলেন, ‘কম খরচে লাভজনক ফসলের মধ্যে অন্যতম লটকন। এই ফলের বাগান শুরু করতে প্রথমে খরচ বেশি পড়লেও পরবর্তীতে বিঘাপ্রতি ১০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয় না। সে তুলনায় লাভ বেশি হয়।’ তবে করোনার কারনে এ বছর বাম্পার ফলন হলেও বাজার দাম কিছুটা কম। একই গ্রামের লটকন চাষি নজরুল ইসলাম মিয়া বলেন, ‘স্থানীয় বাজার ছাড়াও লটকন গাছে ধরার পর জমিতেই পাইকারি বিক্রি করে দেওয়া যায়। পাইকাররা বাগান কিনে দেশে বিদেশের বাজারে লটকন পাঠিয়ে থাকেন।

করোনার কারনে এ বছর পাইকার কম এ জন্য আমরা নিজ খরচে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় লটকন নিয়ে যাচ্ছি, তবে ঢাকার বাজারে করোনার এবার লটকনের ক্রেতা কম এবং বিক্রিও কম। চাষি এবং ব্যবসায়ীদের দাবি এ অঞ্চলের লটকন চাষাবাদে সরকারি পৃষ্টপোষকতা, সরবরাহ, বাজার ব্যবস্থাপনা করলে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যাবে।

নকি