নরসিংদীর পৌরনির্বাচনে নৌকায় নতুন মাঝি আশরাফ

আগের সংবাদ

মন্ত্রীপুত্র-মেয়র ভাংচুর-সংঘর্ষে মনোহরদীতে আহত ১২

পরের সংবাদ

দলীয় কোন্দল কি প্রকট করবে পৌর মনোনয়ন?

মো. রাসেল আহমেদ, নরসিংদী সদর

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২১ , ৭:০৯ অপরাহ্ণ

নরাসিংদী জেলায় শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির সুষ্ঠু চর্চা হলেও রাজনীতিতে চলছে কাদা ছুড়াছুড়ি। জেলা থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত আওয়ামীলীগের প্রতিটি ইউনিটের রাজনীতি রয়েছে দ্বিধা-বিভক্তি। পুরো এলোমেলো হয়ে আছে আওয়ামীলীগের দলীয় অবস্থান। জেলার সভাপতি-সেক্রেটারী বদলের পর এখন পৌর মনোনয়নেও এসেছে পরিবর্তন। দীর্ঘদিনের মেয়র পদে পরিবর্তন আসায় এবার মনোনয়ন পেয়েছেন নৌকার মনোনয়ন আশরাফ হোসেন সরকারে। এখন প্রশ্ন হলো এ পরিবর্তন কী দ্বন্ধ নিরসন করবে নাকি উস্কে দিবে?

দলের এ বিভক্তির পেছনে রয়েছে নরসিংদী সদর আসনের সাংসদ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরু(বীর প্রতীক) ও নরসিংদী পৌরসভার মেয়র কামরুজ্জামান কামরুলের পারস্পরিক কোন্দল। এ প্রভাবশালী দুই নেতার অবস্থান দুই মেরুতে। দুজনেই দলীয় ও ব্যক্তিগত নানা ইস্যুতে তেলে বেগুনে অবস্থা। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনেও তাঁদের সম্পর্কের টানাপোড়ন স্পষ্ট ছিল ।

হিরু নরসিংদী সদর আসনের সাংসদ টানা তিন মেয়াদে বহাল আছেন এবং সাথে ছিলেন নরসিংদী জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি। আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে তাঁকে জেলা সভাপতির পদ থেকে বহিষ্কার করা হলে তাঁর জেদ আরো দ্বিগুণ বাড়ে। নানা কৌশলে বুঝিয়েছেন তাঁর পদ হারানোর পেছনে পৌর মেয়র কামরুজ্জামানের হাত ছিল। তিনি পৌর নির্বাচনে তার পছন্দের প্রার্থীর দলীয় মনোনয়ন পেতে যা করার তা করবেন বলে বিভিন্ন সভা-সমিতিতে ইঙ্গিতও দেন। অবশেষে নরসিংদী পৌরসভাতে নৌকার মনোনয়ন আশরাফ হোসেন সরকারের পক্ষে আসায় তাঁর ইঙ্গিত বাস্তবে রুপ নিল বলে মনে করা হচ্ছে।

অপরদিকে নরসিংদী পৌরসভা নৌকার কান্ডারি হিসেবে কামরুজ্জামান কামরুল ও তাঁর সমর্থকরা ছিল নিশ্চিত। তারা এ কথাও বলেছেন যে,’নরসিংদী পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে একমাত্র কামরুজ্জামানই যোগ্য! মনোনয়ন পেলে তিনিই পাবেন।’ কিন্তু সে কথা এখন গুড়ে বালি। অবশেষে সকল কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মনোনয়ন পেলেন সাবেক মেয়র মতিন সরকারের ছেলে হিরু গ্রুপের আশরাফ হোসেন সরকার ।

তাহলে কি ভোটের আগেই হেরে গেলেন বর্তমান মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল? এ প্রশ্নের উত্তর জানতে মিররের কথা হয় দলের জ্যেষ্ঠ ও কনিষ্ঠ অনেক নেতা কর্মীর সাথে। তারা অনেকে কামরুজ্জামান ও আবার অনেকে আশরাফ পন্থী। যে যার গ্রুপের যথেষ্ট পক্ষে অবস্থান ধরে রেছেখেন।

তবে দলের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন,’আসলে আমরা পরিবর্তন চেয়েছিলাম। অনেক দিন তো কামরুল কে দেখলাম এবার আমরা ক্লান্ত নতুন কারো অপেক্ষায় ছিলাম। আশরাফ হোসেন সরকারকে মনোনয়ন দেওয়ায় আমরা খুশি ! নরসিংদী জেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে নেত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা রইল ।তিনি আমাদের মনের ভাষা বুঝেছেন।’

নতুন ভোটার তাসনিম বলেন, আমি এবার ভোটার হয়েছি। প্রথম কোনো নির্বাচনে ভোট দিব। খুবই উৎসুক ছিলাম মনোনয়ন নিয়ে। কামরুজ্জামান কামরুল ও আশরাফ হোসেন সরকার দুজনেই আমার পছন্দের ছিলেন। আশা করি সুষ্ঠু ভাবে সকল কিছু সম্পন্ন হবে ।

বর্তমান মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল এবং সাংসদ নজরুল ইসলাম হিরু স্থানীয় রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা পূর্ণ অবস্থানে ছিলেন সবসময়ই। একজন অন্যজনকে নানাভাবে কোণঠাসা করার কৌশল করতেন প্রায়ই। পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থীতা নিয়েও দুজনের স্নায়ুযুদ্ধ ছিল। যদি বর্তমান মেয়র পুনরায় নৌকা মার্কায় নমিনেশন পেতেন তাহলে নজরুল ইসলাম হিরু তার অবস্থান হারাতেন। তিনি কখনোই কামরুজ্জামান কামরুল কে নৌকার মাঝি হিসেবে চাননি। কামরুলের বিকল্প হিসেবে তার পক্ষের চারজন কে দলীয় নমিনেশন সংগ্রহ করান। অবশেষে প্রথম যুদ্ধে নজরুল ইসলাম জয়ী হলেন। তার পক্ষের প্রার্থী আশরাফ হোসেন সরকার নৌকার প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হওয়ায়। কামরুজ্জামান কামরুল কে তিনি যেন ভোটের আগেই হারিয়ে দিলেন ।

এখন দেখার পালা কামরুজ্জামান কামরুল কি করেন। তিনি কি দলীয় সিদ্ধান্তকে মেনে নেন নাকি নিজে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে পৌর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।

শহরের সুধিজনের মতে ,’যেহেতু দলীয়ভাবে আশরাফ হোসেন সরকারকে নমিনেট করা হয়েছে তা কামরুজ্জামান কে মেনে নেওয়াই উচিত। তবে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে গেলে কামরুল জয়ী হলে মঙ্গল তার জন্য আর পরাজিত হলে একুল ওকুল দু’কূলই হারাবেন। না থাকবে তার দলীয় পদবি না থাকব পৌর মেয়রের চেয়ার।’

নকিব