প্রতিবাদ না করার পাপের ফল ..

আগের সংবাদ

পুলিশ হেফাজতে পিতা-পুত্রকে হত্যায় ফুঁসছে ভারত

পরের সংবাদ

জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষা, শিক্ষার মেরুদণ্ড শিক্ষক

 এইচ আর অনিক, শিক্ষক ও কলামিস্ট, নরসিংদী

প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০২০ , ৮:১৩ অপরাহ্ণ

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড এই কথাটি খুব প্রাচীনকাল থেকেই শুনে আসছি আমরা সবাই। আসলেই কি শিক্ষা ই জাতির মেরুদণ্ড! শিক্ষা যদি একটি জাতির মেরুদণ্ড হয় তাহলে শিক্ষক প্রতিনিধি বা শিক্ষার ফেরিওয়ালারা ই সেই মেরুদণ্ডের প্রদান উৎস ও মূল চালিকাশক্তি। শিক্ষকরা হচ্ছে আগামী জাতি গঠনের হাতিয়ার ও সুনিপন কারিগর।এজন্যই বলা যায় “জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষা আর শিক্ষার মেরুদণ্ড শিক্ষক”।
সাড়া পৃথিবী জুড়ে আজ অদৃশ্য এক ভাইরাসের আক্রমণে পর্যুদস্ত। বাংলাদেশে এই সংক্রমণ দেখা দেয় ০৮ ই মার্চ ২০২০ এ প্রাথমিক পরীক্ষায় ৩ জন শনাক্তের মাধ্যমে।সারাবিশ্ব যখন এই পরিস্থিতির প্রকট অবস্থা ধারণ করে ও মৃত্যুর সংখ্যা মুহুর্মুহু গতিতে বেড়ে চলে তখনই শিক্ষা মন্ত্রনালয় কর্তৃক ছুটির প্রজ্ঞাপন, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের আদেশনামার ভিত্তিতে বাংলাদেশের সকল সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়।তারই ফলশ্রুতিতে নরসিংদী জেলার সর্বস্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো ১৭ই মার্চ ২০২০ থেকে শিক্ষার্থীদের ক্লাসসহ যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে। জনগণের মাথাপিছু অায়ের দিকে লক্ষ্য না রেখে সরকার করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পূর্বেই সরকারের তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তে বন্ধ হয়ে যায় জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নরসিংদী জেলার সকল প্রাইভেট কলেজ,স্কুল ও কিন্ডারগার্টেন গুলো পড়ে যায় অনিশ্চিত চিন্তায়। প্রথম দিকে লকডাউন এর মাত্রা কম থাকলেও ধীরে ধীরে এই পরিস্থিতির ব্যপকতা বৃদ্ধি পায়। প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান গুলো স্বাভাবিক ভাবে মনে করেছিল যে হয়তো ১-২ মাস পরে পরিবেশ পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে। এরই মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সকল কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপদে পরে যায় প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করা শিক্ষকসমাজ।শিক্ষকদের বর্তমান অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন।
শিক্ষকদের মেরুদণ্ড আজ বেঁকে গিয়েছে, তারা আজ চরম হতাশাগ্রস্থ। মানবেতর জীবনের পাশাপাশি ঘরের কোনে বসে বোবাকান্না যেনো আজ তাদের শেষ আশ্রয়। শোচনীয় এই পরিবেশে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে রয়েছে এ জেলার প্রায় ১০৫০ জনের মতো প্রাইভেট কলেজ শিক্ষক। এছাড়াও প্রাইভেট স্কুল ও কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ ও কল্পনাতীত।পৃথিবীর সকল দেশে শিক্ষকদের মূল্যায়ন সর্বপ্রথম কিন্তু আমাদের বেলায় খুবই নগন্য। প্রাইমারি থেকে শিক্ষা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় গন্ডি পেরিয়ে আজ যারা দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য হয়েছে তারাও কিন্তু কোন না কোন শিক্ষকের ছাত্র ছিলো।আজ সেই জাতি গড়ার কারিগর শিক্ষক বুকে চাপা কষ্ট নিয়ে দিনাতিপাত করছে। আত্মসম্মান বোধ নামক জেলখানায় বন্দি তাদের সকল আবেগ,অনুভূতি ও পারিবারিক জীবন।শিক্ষকরা হচ্ছে আদর্শ মানুষ গড়ার কারিগর। শ্রেষ্ঠ মানব হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)কে যখন পৃথিবীতে প্রেরন করা হয় তখন আল্লাহ তাআলা উনাকে বলেছিলেন “আমি আপনাকে বিশ্বজাহনের শিক্ষক হিসেবে পাঠালাম”। আর সেই তখন থেকেই চলছে শিক্ষকতা নামক এই মহৎ কাজ বা পেশা।মুসলমানদের প্রিয় রাসুল হযরত মোহাম্মদ থেকে শুরু করে সকল ধর্মের মহামান্য ব্যক্তিগন শিক্ষক ও শিক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা ছিলো অহর্নিশ। এজন্য হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলতেন-” শিক্ষক ও শিক্ষার্থী ছাড়া কেউই আমার এতো আপন নয়”। পিতা-মাতা সন্তান জন্ম দিলেও সন্তানকে আদর্শ ও প্রকৃত মানুষ হিসেবে রুপান্তর করেন কিংবা সঠিক রাস্তার পথ দেখিয়ে দেয় একজন শিক্ষক।
শিক্ষকরা মানুষ চাষ করে, মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটায়,নীতি-নৈতিকতা ও জীবনাদর্শ হিসেবে গড়ে তুলেন।শিক্ষকদের মর্যাদা, সম্মানের দৃষ্টিতে দেখার ঐতিহ্য ও প্রবনতা বেশ প্রাচীন। সামাজিকভাবে মর্যাদাপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ হলেও সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়না।পুরনো সে যুগের ভাগ্য কিছুটা পরিবর্তন হলেও সিংহ ভাগই অপরিবর্তিত ।এদেশের শিক্ষকরাই জনগণের আদমশুমারী, নির্বাচন,সুষ্ঠু ভোটার তালিকা, টিকাদান,শিশু জরিপ,উপবৃত্তি বিতরণ ইত্যাদি ছাড়াও সামাজিক সচেতনতার কাজগুলো আঞ্জাম দিয়ে থাকেন।জাতীয় সকল কার্যক্রম ও উন্নয়নে শিক্ষকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বর্তমানে এই করোনা ভাইরাসের ছোবলে অধিকাংশ শিক্ষক মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে।শিক্ষকরা জাতিকে আলোকিত করতে গিয়ে মোমবাতির মতো আজ নিজেরাই নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষকদের চেহেরায় কষ্টের ভাঁজ, ঠোঁট শুকিয়ে মুখ গুলো হয়ে গিয়েছে আজ মলিন। প্রাইভেট কলেজ বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার জগতে নরসিংদী জেলা সেরা।এই জেলার মধ্যে সদর উপজেলা শিক্ষানগরী হিসেবে চিহ্নিত।
ঐতিহ্যবাহী এই জেলা থেকে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন দলের জাতীয় নেতা,মহাসচিব, মন্ত্রী, ঢাবি ভিসি,সচিব,রাষ্ট্রদূত ও কবি-সাহিত্যিক।আজ সেই মানুষ গড়ার শিল্পী বা আর্টিস্টরা যদি অনাহারে দগ্ধ হয়ে ধুঁকে ধুঁকে জীবন পারি দেয় তাহলে আমরা অশিক্ষিত জাতির উপাধি পাওয়া এখন সময়ের দাবী! শিক্ষকদের নিয়ে এই জেলার প্রবীন শিক্ষক ও শিক্ষাবিদ ব্যক্তিদের মাধ্যমে গঠন করা হয়েছে বিভিন্ন সমিতি কিন্তু করোনার এই পরিস্থিতিতে সেই সমিতি’র বাস্তব কোন কার্যক্রম এখনো চোখে পড়েনি। তাহলে এইসকল লোকদেখানো সমিতি ও সংস্থা কিসের জন্য গঠন করা হয়েছে তা শিক্ষকসমাজের বোধগম্য নয়।প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ ও পরিচালকবৃন্দ কি আজ কতোটুকু সহযোগিতা করেছেন নিম্ন আয়ের এই সকল শিক্ষকদের প্রশ্ন রয়ে গেলো আপনাদের প্রতি? ? শিক্ষকদের সুবিধার্থে কয়টা প্রতিষ্ঠান এই সময়ে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দিয়ে পর্যাপ্ত সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন তাদের সংখ্যা ২-১ টি প্রতিষ্ঠানের বেশি নয়।প্রাইভেট কলেজে শিক্ষকদের নিকট থেকে ষোলআনা পুরোপুরি আদায় করে নিলেও বেতন-ভাতা দেয়ার ক্ষেত্রে একমাস পেরিয়ে আরেকমাস চলে আসলেও তাদের প্রাপ্য শ্রমের মূল্য প্রদান করতে গড়িমসি করা হয়।এই অপসংস্কৃতি ও অনৈতিক চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসে শিক্ষকদের প্রতি সেবার মানসিকতা বাড়াতে হবে।তাদের পরিশ্রমের মূল্য মাসের প্রথমে প্রদান করার জন্য জোড়ালো।
আপনার সন্তানকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে শিক্ষকদের ভুমিকা ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই।আজকে যদি অভিভাবক শ্রেণিরা শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বর্তমান এই পরিবেশ পরিস্থিতিতে পাশে না ধারায় তাহলে আগামীতে আপনারা সন্তানকে মানুষ করার জন্য কোন শিক্ষক খোঁজে পাবেন কি না একটু ভাবা দরকার। বিদ্যা একটি ফরজ ইবাদাত আর সেই ফরজ ইবাদাতের জন্য ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে একজন শিক্ষক। মনে রাখা উচিত-“”শিক্ষক বাঁচলে শিক্ষা বাঁচবে,শিক্ষা বাঁচলে দেশ বাঁচবে””
এইচ আর অনিক, অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) নরসিংদী ইউনাইটেড কলেজ।
নকি