আমাদের সমাজে প্রায়ই ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিতে তীব্র মত-পার্থক্য দেখা দেয়। এসব নিয়ে অনেক গোঁড়ামিও দেখা যায় সমাজে। আর এসব নিয়ে এবার ছোট একটি তত্ত্ব…
তত্ত্বটি বুঝতে পারলে অনেক গোঁড়েমি কমে যাবে।
● কুরআন হাদীসের যে বক্তব্যগুলো একটা মাত্র ব্যাখ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ, তার ব্যাপারে ফকীহগণের মাঝে কোন মতপার্থক্য নেই, মতপার্থক্য থাকার কোন যৌক্তিকতাও নেই। (যেমন: নামাজ দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ, সামর্থবানের উপর হজ্জ জীবনে একবার ফরজ )
● কুরআন হাদীসের যে বক্তব্যগুলোর মধ্যে বিভিন্নমুখী ব্যাখ্যার সুযোগ থাকে; শাব্দিক কারণে হোক অথবা মূলনীতির কারণে হোক, সেখানে ফকীহগণের মাঝে মতপার্থক্য হবেই। এবং মতপার্থক্য না থাকার কোন কারণ নেই। (যেমন: قروء শব্দের অর্থ: হায়েজও হতে পারে, নিফাসও হতে পারে। نكاح শব্দের অর্থ: বিয়েও হতে পারে, সহবাসও হতে পারে। নামাজে আমীন আস্তে অথবা জোরে বলা, অতিরিক্ত রফয়ে ইয়াদাইন করা অথবা না করা, এ ধরনের আরো বহু ক্ষেত্রে বিভিন্ন ফকীহর মত বিভিন্ন রকম হতে বাধ্য।)
● এ জাতীয় মতপার্থক্যের ক্ষেত্রে সাধারণত ফকীহগণ কী করে থাকেন?
১: বাহ্যিকভাবে বিপরীতমুখী দুটি বিধানের মাঝে সমন্বয় করার চেষ্টা করে থাকেন।
২: যুক্তি, উদাহরণ, ভিন্ন অন্য একটা দলীলের ইঙ্গিতে- একটা মত গ্রহণ করে অপর মতকে নাকচ করেন, নাকচ করতে বাধ্য হন।
● ২ নং পয়েন্ট খুব ভালো করে উপলব্ধি করুন। এটা বুঝতে পারলেই মতপার্থক্যের ক্ষেত্রে আপনার আমার অনেক গোঁড়ামি কমে যাবে। আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ যেটা যুক্তি- তর্ক উদাহরণ দিয়ে নাকচ করলেন, শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ ঠিক সেটাই ভিন্ন যুক্তি-তর্ক উদাহরণ দিয়ে গ্রহণ করলেন। ইমাম বুখারি যেটা গ্রহণ করলেন, ইমাম তিরমিযী ঠিক সেটাই নাকচ করলেন। ফকীহ/মুজতাহিদগণের এ রকম মতপার্থক্যের শত শত উদাহরণ আছে। এই যে একজন ফকীহ/মুজতাহিদ একটা মতকে নাকচ করলেন! অপর মতকে প্রাধান্য দিলেন! তিনি কিসের ভিত্তিতে নাকচ করলেন? তাঁর কাছে কি অহী এসেছে? মোটেই নয়। যাস্ট সেটা ব্যক্তির একান্তই ব্যক্তিগত গবেষণা ও ইজতেহাদ।
● প্রথম অংশ আবার খেয়াল করুন, ব্যাখ্যা যদি একটির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত, তাহলে তো মতপার্থক্যের দরকারই ছিল না।
● সিদ্ধান্ত: যেহেতু ফকীহ/ মুজতাহিদগণের কারো মতই চূড়ান্তভাবে অহী দ্বারা নিশ্চিত নয়; সেগুলো শুধু প্রবল ধারণা মাত্র, সে জন্য সাহস করে বুক ফুলিয়ে বলুনঃ
“আমরা একজন ফকীহ/মুজতাহিদের প্রতিও ঈমান আনি নাই। আমরা তাদের সবাইকে সম্মান করি। আমাদের জ্ঞান, বিবেক- বুদ্ধি অনুযায়ী যে কোন মুজতাহিদের বক্তব্য গ্রহণ করার ইখতিয়ারও আমাদের আছে, নাকচ করারও ইখতিয়ার আছে। বিশেষ কোন ব্যক্তি/ দল/ মানহাজের কাছে আমাদের বিবেক আমরা বন্ধক দেই নি।”
● এরপরও যারা নিজের অনুসৃত ইমাম, দল, মানহাজকেই একমাত্র হক্বের মানদণ্ড মনে করে থাকেন, তারা হয়তো মনে করেন, শরয়ী বিধানে আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল (সা) এর যে মর্যাদা, তার অনুসৃত দল/শায়খেরও সেই মর্যাদা! (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)
মনে রাখবেন, টাকি মাছ দেখতে শোলের মতো হলেও সেটা টাকিই, সেটা কখনও শোল মাছ নয়।