নরসিংদী জেলা আওয়ামীলীগে বিভাজন ও প্যানেলের কারনে তৈরি হয়েছে দলীয় কোন্দল। জেলা শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে অভ্যন্তরীণ নানা বিষয় নিয়ে জটিলতা চলছে দীর্ঘ দিন ধরে। শোকের মাস আগস্ট কে কেন্দ্র তা সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। নরসিংদী জেলা শাখার সভাপতি পদে আছেন মো. নজরুল ইসলাম হিরু (বীরপ্রতীক)। তিনি নরসিংদী সদর আসনের সাংসদ। সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন ভুঁইয়া। মতিন ভুঁইয়া প্যানেলে যুক্ত হয়েছেন নরসিংদী শহর আওয়ামীলীগের সভাপতি পৌর মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল।
শোকের মাস আগস্ট কে কেন্দ্র জেলা আওয়ামীলীগের দু’টি পক্ষ একই স্থানে দুই কর্মসূচীর আয়োজন করে। একটির নেতৃত্ব দেন নজরুল ইসলাম হিরু ও তার সমর্থক আরেকটির নেতৃত্ব দেন আব্দুল মতিন ভুঁইয়া ও তার সমর্থক। মতিন ভুঁইয়ার সাথে যোগ দেন পৌর মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল।
জেলা শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে বিরাজমান বিরোধকে পুঁজি করে দলটির মধ্যে চলছে নানা ধরনের উত্তেজনা। একপক্ষ আরেক পক্ষকে কটাক্ষ করে বিভিন্ন সভা-সমিতিতে বক্তব্য প্রদান করে আসছেন। এতে করে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে মনে করেন দলটির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
সম্প্রতি দলটির সভাপতি মো.নজরুল ইসলাম হিরুর বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতির আঘাতের অভিযোগ এনে আদালতে মামলা করেন মোস্তাক আহমেদ। মোস্তাক তার মামলার নথিতে উল্লেখ করেন- এমপি সাহেব শহরের আরশীনগর এলাকায় মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ধর্মীয় উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তব্যের কারনে ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট হতে পারে। তাই তিনি বক্তব্য পরিহার করে সম্প্রীতি বজায় রাখতে মামলা করেন। মামলা নাম্বার ৪৯০।
অপরদিকে মো. নজরুল ইসলাম হিরুর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে বলে দাবী তার সমর্থকদের। মামলার বাদীকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে সত্য ঘটনা উদঘাটন করার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান করে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। শনিবার ৫ আগস্ট জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ের সামনে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়।
জেলা আওয়ামীলীগের এ ধরনের কর্মকান্ডে রীতিমতো হতাশ দলটির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। তাদের অবস্থান এখন ‘কুল রাখিনা শ্যাম রাখি’। তারা মনে করেন দুজনের মধ্যে যে বিরোধ দেখা দিয়েছে তাতে ব্যক্তির চেয়ে দলের ক্ষতি হবে বেশি।
এসব বিষয়ে দলটির কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতাকর্মীর সাথে নরসিংদী মিররের আলাপ হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, তাঁদের এ কাদা ছুড়াছুড়ি শুধু তাঁদেরকেই প্রভাবিত করছেনা ।পুরো জেলার আওয়ামী রাজনীতিতে বিরুপ প্রভাব ফেলছে। তাদের উচিত অতি দ্রুত এ দ্বন্দ্বের অবসান ঘটানো।
দলটির আরেকজন দায়িত্বশীল বলেন,হিরু ভাই দলের সভাপতি তাঁর কাজ হলো দলকে সুসংগঠিত করা। আর তাঁর এ কাজে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মতিন ভাই সহযোগিতা করা কিন্তু তাঁরা দুজন দুই মেরুতে। এতে দলটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, আমি দুজনকেই বলব আপনারা এক মেরুতে আসুন আর নাহয় দায়িত্ব থেকে সরে যান।
বর্তমানে যত জনসভা হচ্ছে সবখানে রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভুত বক্তব্য প্রদান করা হচ্ছে বলে মনে করেন দলটির সুহৃদ মহল। তারা মনে করেন এতে আওয়ামী রাজনীতির এতিহ্য নষ্ট হচ্ছে। শীঘ্রই অন্তর্কোন্দল দূর না হলে দলের অপূরণীয় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন দলটির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।