ভালোভাবে বাচাঁর পথ দেখাচ্ছে “এসো বাঁচতে শিখি”   

আগের সংবাদ

নুরুল ইসলামের মৃত্যুতে বিএনপির মিলাদ ও দোয়া

পরের সংবাদ

এতিমখানার অর্থ আত্মসাতের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

 এইচ আর অনিক, নরসিংদী

প্রকাশিত: জুলাই ১৩, ২০২০ , ৯:৪১ পূর্বাহ্ণ

নরসিংদী জেলার পলাশ থানার তালতলীতে অবস্থিত ইছাখালী দারুল মাসাকিন ইসলামি এতিমখানার এতিমদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠেছে। বর্তমানে ইছাখালি দারুল মাসাকিন ইসলামি এতিমখানা ও ইছাখালী ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও এতিমখানার সাধারণ সম্পাদক-সভাপতি আ খ ম রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে নরসিংদী সমাজকল্যান অধিদপ্তরে একটি অভিযোগ দাখিল করা হয়। রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে এতিমখানার সভাপতি সোহরাব মাস্টার রেজাউল করিমের  এ অভিযোগ দাখিল করেন ।
সরেজমিনে তদন্ত করে এবং বাদী ও বিবাদী সাথে কথা বলে জানা যায় যে ইসলামি এতিম খানার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর থেকেই বিভিন্নভাবে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাৎ সাথে জড়িত হয়ে পরেন।
এ বিষয়ে দারুল মাসাকিন এতিমখানার সাধারণ সম্পাদক ও তালতলী ইছাখালী ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জনাব রেজাউল করিম কে অভিযোগের সত্যতা জানতে চাইলে তিনি বলেন আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তিনি বলেন বর্তমান কমিটির সভাপতি সোহরাব মাস্টার এবং তিন লক্ষ টাকার উপরে অর্থ আত্মসাতের সাথে জড়িত এবং এ সমস্ত কাজের সমস্ত তথ্য প্রমাণাদি উনার কাছে আছে রয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি অডিট কমিটির বিভিন্ন ধরনের আয়-ব্যয় নিয়ে ও নির্মাণ খাতের অনেক বিষয় নিয়ে বর্তমান কমিটির সভাপতি সোহরাব মাস্টার কে তিনি পাল্টা দুর্নীতিবাজ বলে অভিহিত করেন।তিনি আরও বলেন যে বর্তমান কমিটির সভাপতি সোহরাব মাস্টার তার নিজের স্বার্থ ও অবৈধ কাজে বাধা দেয়ায় একটি ভুয়া মিথ্যা অভিযোগপত্র দাখিল করেছে বলে  জানান।
এ ব্যাপারে সোহরাব মাস্টার কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন বর্তমান মাদ্রাসার অধ্যক্ষ একজন দুর্নীতিবাজ এবং সমাজের কোন মানুষের সাথে উনার কোন ধরনের সামাজিক যোগাযোগ নেই।মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, শিক্ষক,অভিভাবক ও স্থানীয় লোকজন অতিষ্ঠ উনার এই সকল অনিয়ম দেখে। তিনি আরো বলেন এই মাদ্রাসায় শিক্ষাব্যবস্থার কোন ধরনের অগ্রগতি নেই। ২০০৩ সালে বর্তমান অধ্যক্ষ নিযুক্ত হওয়ার পর থেকে এই দীর্ঘ ১৭ বছরে আয় ব্যয়ের সঠিক হিসাব কমিটিকে প্রদান করেন বলা হয়নি।  উনি ওনার প্রয়োজন যাকে মনে করেছে তাকে উনি উনার গভর্নিং বডিতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। এতো বড় একটি মাদ্রাসাকে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় এই বিষয়ে তার মধ্যে কখনোই কোনো পরিকল্পনা পরিলক্ষিত হয়নি।
এতিমখানার জমিদাতার ছেলে নজরুল সিকদার এর ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমার বাবা ইছাখালি ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসা,মসজিদ ও এতিমখানার জায়গা দিয়েছেন। বর্তমান সম্পদ দাতা হিসেবে আমার নাম থাকার পরেও বর্তমান অধ্যক্ষ আমাকে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে গভর্নিং বডিতে নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে এবং আমাকে উল্টাপাল্টা বক্তব্য শোনিয়ে চুপ রাখেন।মাদ্রাসা থেকে প্রতি বছর বছর কিছু অর্থ পাওয়ার কথা ছিল কিন্তু আজ ২০ বছরেও সেটি বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। এই হিসাব আ খ ম রেজাউল করিম এর নিকট থেকে আজও আমরা নিতে পারিনি।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায় যে তালতলী নামার বাজারে সমস্ত দোকানদাররা তালতলী মাদ্রাসা মসজিদে নামাজ আদায় করত তাদের নামায আদায়ের যে জায়গাটি ছিল বর্তমান অধ্যক্ষ রাস্তাটি বন্ধ করে দেন এবং তিনি এলাকাবাসীকে বলেন যে বর্তমান এমপি মহোদয়ের নির্দেশে তিনি রাস্তা বন্ধ করেছেন এবং যখন বন্ধ করা হয় তখন বাজারের ব্যবসায়ীবৃন্দ বাধা প্রদান করে এবং তিনি এমপি মহোদয়কে বাজারের ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে উল্টা-পাল্টা বুঝিয়ে পুলিশে নিয়োগ করেন।
সরেজমিনে আরো জানা যায় বর্তমান অধ্যক্ষ ইছাখালি দারুল ইসলামে এতিমখানার দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি তার একক ক্ষমতাবলে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যে মূল ভবনটি রয়েছে সেটিকে তিনি ভেঙে ফেলেন এবং এতিমখানার জায়গাতে মাদ্রাসার ভবন স্থাপন করেন বলেও সত্যতা  পাওয়া যায়। বর্তমানে তালতলী এতিমখানার নেই নিজস্ব কোন ভবন। গত বছর সমাজসেবা থেকে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্ধ আসে সেটি যথাযথভাবে শিক্ষার্থীদের পিছনে পিছনে ব্যয় করা হয়নি বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।  স্থানীয়রা জানান এতিমখানায় আছে মাত্র ৫ থেকে ৭ জন শিক্ষার্থী।তারা এই এতিম বাচ্চাদের মাদ্রাসার পাশে একটি ছোট্ট রুমের মধ্যে জায়গা দিয়েছেন থাকার জন্য।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন এ পর্যন্ত প্রায় চল্লিশটি অনুদান এসেছে যেগুলো অধ্যক্ষ এবং সভাপতি সমঝোতা করে বিক্রি করে অর্থ নিজেরা নিজেদের মধ্যে নিয়ে নিয়েছেন।  অধ্যক্ষ এবং সভাপতি এতিমখানার জায়গাতে দোকান বানিয়েছে এবং তিনি একজনের কাছ থেকে একেক রকম অর্থ গ্রহণ করেছেন যেগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা পাওয়া যায়। আকাশ নামে একজন ব্যক্তি বলেন যে তিনি এক লক্ষ টাকা প্রদান করেছে দোকান বরাদ্দ নেওয়ার জন্য।
এ ব্যাপারে পলাশ উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মনির  হোসেন জানান, অর্থ আত্মসাৎতের লিখিত  অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজকে বিষয়টি  এমপি স্যার  ও উপজেলা চেয়ারম্যানের আমলে নিয়েছেন এবং  তদন্তের জন্য উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কারিয়ুল্লাহ সরকারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা,সত্যতা ও সঠিক কারণ উদঘাটনের   জন্য  বলা হয়।
উল্লেখ্য এ  মাদ্রাসার ফলাফলও আশানুরূপ নয় বলে জানান স্থানীয়রা। এলাকাবাসীর সাথে আলোচনা করে আরো জানা যায় যে এলাকাবাসী স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছে যে তালতলী এতিমখানা একটি ঐতিহ্যবাহী এতিমখানা।  সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক আ খ ম মো.রেজাউল করিমের দুর্নীতির কারণে  ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছে মাদ্রাসাটি। এলাকবাসী ও স্থানীয় সচেতন অভিভাবকদের প্রত্যাশা এতিমখানা টিকিয়ে রাখার জন্য সকলকে এগিয়ে আসার পাশাপাশি  জেলা প্রশাসক এই ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
নকি