স্বামীর হাতে খুুন
নরসিংদীর বেলাব উপজেলার মার্জিয়া কান্তা (২৫) নামে এক গৃহবধুকে স্বামী ও তার সহযোগী কর্তৃক হত্যা করে লাশ গুম করার দুই বছর পর রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নরসিংদী। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী ও কুয়াকাটার একটি আবাসিক হোটেলের দুই মালিকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার শহরের সাহেপ্রতাপে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান পিবিআই নরসিংদীর পুলিশ সুপার এনায়েত হোসেন মান্নান।
নিহতের মরদেহ গভীর সমুদ্রে ফেলে আসার ঘটনা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে হোটেল মালিক ও তার ভাই। শনিবার নরসিংদীর অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট শামিমা ইসলামের আদালতে তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
নিহত মার্জিয়া কান্তা উপজেলার বীরবাঘবেড় গ্রামের সেহারাব হোসেন রতনের মেয়ে। কান্তা সাভারের আশুলিয়ায় কান্তা বিউটিপার্লার নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক ছিলেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, নিহতের স্বামী কুড়িগ্রামের রৌমারি এলাকার শহিদুল ইসলাম সাগর (৩৭), সাগরের সহযোগী রৌমারি থানার রতনপুরের শাহিনুর ইসলামের ছেলে মো: মামুন মিয়া (২৬), পুটয়াখালীর কুয়াকাটার হোটেল আল মদিনার মালিক মো: দেলোয়ার হোসেন (৪৪), তার ভাই আনোয়ার হোসেন (৩৭) এবং হোটেল ম্যানেজার আমির হোসেন (৩৮)।
সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই নরসিংদীর পুলিশ সুপার এনায়েত হোসেন মান্নান জানায়, পরিচয়ের সূত্রধরে পার্লার ব্যবসায়ী মার্জিয়া কান্তার সাথে বিয়ে হয় কুড়িগ্রামের শহিদুল ইসলাম সাগরের। বিয়ের পর সাগরের আরো একাধিক স্ত্রী রয়েছে জানতে পারে কান্তা। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কলোহের সৃষ্টি হয়। ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে গৃহবধু মার্জিয়াকে নিয়ে ভারত ভ্রমনের উদ্দেশ্যে নরসিংদীর বেলাব উপজেলা থেকে সাভারের আশুলিয়ার বাসায় যায় স্বামী সাগর। সেখান থেকে প্রস্তুতি নিয়ে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে তারা শরিয়তপুর যায়। সেখানে সহযোগী মামুনকে নিয়ে নদী ভাঙ্গন দেখানোর কথা বলে স্ত্রী কান্তাকে হত্যার পরিকল্পনায় ব্যর্থ হয়। পরে শরীয়তপুর থেকে কান্তাকে নিয়ে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত দেখানোর জন্য সেখানকার আল মদিনা নামের একটি আবাসিক হোটেলে পরিচয় গোপন করে উঠেন তারা। ওই হোটেল কক্ষেই স্বামী ও তার সহযোগী মামুন কান্তাকে গলাটিপে হত্যা করে খাটের তলায় লাশ লুকিয়ে রেখে পালিয়ে যায়। পরেরদিন হোটেল কর্তৃপক্ষ ওই কক্ষের দরজা তালাবদ্ধ দেখে ও বোর্ডারের মোবাইল বন্ধ পেয়ে পুলিশ কে খবর দেয়। পরবর্তীতে হোটেল কক্ষ থেকে লাশ সন্ধান করতে না পারলেও অজ্ঞাত ব্যক্তিদের লাগেজ, কাপড়, একটি চাপাতিসহ কিছু আলামত উদ্ধার করে বিষয়টি সাধারণ ডায়েরি করে রাখে স্থানীয় পুলিশ।
নিহতের পিতা মেয়ে নিখোজ এর ঘটনায় বেলাব থানায় স্বামী শহিদুল ইসলাম সাগর কে আসামী করে গত ২০১৯ সালের জানুয়ারীতে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এদিকে কান্তা নিখোঁজের ঘটনায় বেলাব থানায় দায়ের করা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। পরে পিবিআই তদন্তে নামলে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তার স্বামী ও সহযোগীকে গ্রেপ্তার ও তদন্তে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর হত্যার তথ্য। গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা জানায় হত্যা করে লাশ কুয়াকাটার আল মদিনা হোটেলের খাটের নীচে গুম করে পলাতক থাকে। পরে হোটেলে দূর্গন্ধ পেয়ে হোটেল বয়ের মাধ্যমে খাটের নীচে অজ্ঞাত লাশ দেখতে পায় কুয়াকাটার হোটেল আল মদিনা মালিক দুই ভাই। পরে ব্যবসার সুনাম নষ্ট হওয়ার আশংকা ও পুলিশি হয়রানি এড়াতে হোটেল কর্তৃপক্ষ সেখান থেকে অজ্ঞাত হিসেবে লাশটি বের করে কুয়াকাটা সমুদ্রে ফেলে দেয়। পুলিশ নিহতের পড়নের কাপড়সহ অন্যান্য আলামত উদ্ধার করলেও সমুদ্রে নিক্ষেপ করায় লাশ উদ্ধার করতে পারেনি।গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের জেল হাজতে প্রেরণ করেছে আদালত।