সন্তান নিয়েও বিসিএস জয়ের গল্গ রায়পুরার মেয়ের

আগের সংবাদ

ভালোভাবে বাচাঁর পথ দেখাচ্ছে “এসো বাঁচতে শিখি”   

পরের সংবাদ

সুই-সুঁতোর বাহারী ফুলে রঙিন যাদের জীবিকা

ফারজানা আক্তার (কসবা থেকে), শিক্ষার্থী, ঢা.মে.ক

প্রকাশিত: জুলাই ১২, ২০২০ , ১:৪৬ পূর্বাহ্ণ

সারাদেশের মানুষ যেখানে আজ আতঙ্কিত হয়ে ঘর বন্দি, সেখানে ঘরোয়া ভাবে চলছে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার প্রয়াস। ইতিহাসের পাতা থেকে বিলুপ্তির দিকে অগ্রসর শিল্পের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে পল্লি গ্রামের নব বধূদের। তারা এমন দুর্দিনে হাতে তুলে নিয়েছে তাঁতশিল্পের সাদামাটা কাঁপড়, সুই, রঙ বেরঙের সুঁতো। এই প্রতিযোগিতার রাজ্যে মানুষ জীবন-জীবীকা নির্বাহের জন্য প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কাজ করছে। ঠিক সেসব পেশারই মুখ্যমণি হস্তশিল্প। আর সেই শিল্পে কাজ করে কসবা উপজেলার কাইমপুর ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের অনেক অনেক মানুষ।

প্রতি বছর যখন ফসল ঘরে তোলা হয়, এর পরেই শুরু হয় হস্তশিল্পের অন্তর্গত নকশিকাঁথা তৈরি। এই কাজ শুরু হলেই পপি বেগমসহ পরিবারের সকল সদস্যদের ব্যস্ততা বেড়ে যায় রঙিন কাপড়, রঙিন সুতো আর সুই এর সাথে। আপন মনে ফুটিয়ে তুলে তারা গাছপালা, ফুল, জ্যামিতিক নকশার প্রতিচ্ছবি। সংসারের খরচ বহন করার জন্য স্বামীর পাশাপাশি পপি বেগমের মতো রাশেদা বেগম, শান্তা, রুমা, কোহিনুর, নাম না জানা আরো অনেকেই এই কাজ করছেন। কিন্তু এই কাজের জন্য প্রধান কাঁচামাল হলো গজ কাপড়। যা ছাড়া কাঁথা তৈরি করার চিন্তাও করা যায় না। কর্মীদের নিজ খরচে কাপড়, সুতো কিনে এই কাজ শুরু করতে হয়। ডেলিভারি করার পর কেবল তারা পারিশ্রমিক পায়।

কেউ কেউ যথাযথ পারিশ্রমিক না পেয়ে এ কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। কামালপুর গ্রামের একজন কর্মী জানান, “তাদের সংসারের খরচ মিটিয়ে কাঁথা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কাপড় কিনতে তারা হিমশিম খায়। তাছাড়া দোকানিরা তাদেরকে ন্যায্য স্বল্প মূল্যের কাপড়ও দিতে চায় না। মাঝে মাঝে উপযুক্ত পারিশ্রমিক না পেয়ে কাজে অনীহা আসছে। এমতাবস্থায় তারা গ্রাহকদের সাহায্য প্রার্থনা করেছে।” আগেকার দিনে ঘরে ঘরে নকশিকাঁথা, নকশিপাখা, বড়দের জামার উপর হাতের কাজ ফুটিয়ে তোলা হতো, কিন্তু এখন তা বিরল রূপ নিয়েছে। তাই গ্রামের এসব মানুষ এই কাজ করে সাংসারিক উপার্জন করতে আগ্রহী। অনেকেই তাদের দেখে এই কাজে এগিয়ে আসছে। বাংলার লোকসংস্কৃতি আর গ্রামীণ কুটির শিল্পের একটি বড় জায়গা দখল করে আছে কাঁথা।কাঁথার নকশার এই বৈচিত্র্যের কারণে একে ধরাবাধা ছকে ফেলা কিংবা সেই নকশার দার্শনিক উৎস খোঁজাও দুঃসাধ্য ব্যাপার। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই শিল্পে যত দিন গিয়েছে যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা। নকশী কাঁথার নকশা শুধু কাঁথার মধ্যেই থেমে থাকেনি, গাছ-লতা-পাতা কিংবা ফুল-পাখি সম্বলিত যে নকশা কাঁথায় দেখা যায় প্রায় একই ধরনের নকশা দেখা যায় টেবিলক্লথ, রুমাল, টুপি , বালিশ কিংবা বিছানার চাঁদরে।

বিদেশে চাহিদা বাড়ছে নকশী কাঁথার, নকশী কাঁথা দেশীয় ঐতিহ্য- কারুশিল্পীদের অনবদ্য সৃষ্টি। এই কাঁথা নিয়ে লেখা হয়েছে কাব্য, গাঁথা ও রচনা। বংশানুক্রমে স্মারক চিহ হিসেবেও সংরক্ষণ করা হয়। শৌখিন পণ্য হিসেবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সেলাই হচ্ছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে পরিণত হয়েছে এই কাঁথাশিল্প। আর ভাগ্য বদলে দিয়েছে অনেকের। দেশের চাহিদা মিটিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারেও প্রবেশ করেছে এই কাঁথা। নকশী কাঁথার নকশা শুধু কাঁথার জমিনে সুঁইয়ের ফোঁড়ে ফুটিয়ে তোলা নকশাই নয়, একেকটি নকশী কাঁথার জমিনে লুকিয়ে থাকে গল্প, কখনো ভালোবাসার, কখনো দুঃখের। বাংলার পথে প্রান্তরে হারিয়ে যাওয়া গল্পকে বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে একেকটি নকশী কাঁথা

মাহফুজ/নকি