আরবি বর্ষপঞ্জিতে আজ ৯ জিলহজ। ইয়াওমুল আরাফা বা হাজিদের আরাফার ময়দানে অবস্থানের দিন। এই দিনকেই হজের দিন বলা হয়। সারাবিশ্ব থেকে প্রায় ২৫ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান অবস্থান নিয়েছে ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক আরাফার ময়দানে। প্রতি হিজরি বছরের ৯ জিলহজ মুসলিম উম্মাহকে হজ পালনে ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হতে হয়। আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা।
লাখ লাখ হাজির কণ্ঠে আজ সমস্বরে উচ্চারণ হচ্ছে- ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুল্ক, লা শারিকা লাক’ (অর্থাৎ আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার)।
মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে হাজিরা দিতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সৌদি আরবে সমবেত হওয়া মুসল্লিরা সোমবার মিনায় নিজ নিজ তাঁবুতে নামাজ আদায়সহ অন্যান্য ইবাদত করেছেন। সেখানে ফজরের নামাজ পড়ে আজ সূর্যোদয়ের আগেই হাজিদের ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে হাজির হওয়ার কথা। কেননা, আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়া হজের অন্যতম ফরজ। এখানেই হজের খুতবা প্রদান করা হবে। এ বছর আরাফাতের ময়দানে হজের খুতবা দেয়ার জন্য শায়খ ড. ইউসুফ বিন মুহাম্মদ বিন সাঈদকে নিযুক্ত করেছেন সৌদি বাদশাহ। একই সাথে মসজিদে নামিরাতে সালাত পড়াবেন তিনি।
এই সেই আরাফাতের ময়দান, যেখানে দাঁড়িয়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তার বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। সেই স্মৃতি বুকে ধারণ করে মুসলমানরা সমবেত হচ্ছেন এই মরুর প্রান্তরে। আরাফার ময়দানে জোহর ও আসরের নামাজ একসঙ্গে আদায় করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করতে হবে। মাগরিবের আজানের পরে হাজিগণ মুজদালিফার উদ্দেশে রওয়ানা করবেন। মুজদালিফায় পৌঁছে মাগরিব ও এশার নামাজ একসঙ্গে আদায় করে বিশ্রাম নেবেন।
তারপর পাথর সংগ্রহ করবেন জামারায় প্রতীকী শয়তানকে নিক্ষেপের জন্য। এদিন রাতে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করবেন তারা। পরের দিন সকালে সূর্যোদয়ের পর পাথর নিক্ষেপ করবেন হাজীরা। এরপর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি করবেন। কোরবানি করে মাথা মুণ্ডন করবেন। এহরাম খুলে পরবেন সাধারণ পোশাক। আবার কাবাঘর তাওয়াফ করবেন। সাফা-মারওয়ায় সাতবার চক্কর দেবেন।
এ বছর আরাফাতের ময়দানে হজ পালনকারীদের জন্য ব্যাপক নিরাপত্তা ও চিকিৎসা সেবার সর্বোচ্চ ব্যবস্থাও নিশ্চিত করেছে হজ ও ওমরাহ কর্তৃপক্ষ। মক্কা, মদিনা ও মিনায় হজযাত্রীদের জরুরি স্বাস্থ্যসেবা দিতে নিয়োগ করা হয়েছে হাজার হাজার ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী। কেবল মিনাতেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৩২ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে।
২০১৯ সালে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ হজ পালন করেন। তবে পরের বছরগুলোতে মহামারীর কারণে আকার সীমিত করতে হয়। ২০২০ সালে মাত্র ১০ হাজার এবং ২০২১ সালে ৫৯ হাজার সৌদির বাসিন্দা হজ পালনের সুযোগ পান। গত বছর টিকাপ্রাপ্ত ৯ লাখ ২৬ হাজার মুসলিম হজ পালন করেন। এ বছর প্রায় পঁচিশ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান পবিত্র হজ পালন করছেন। তারমধ্যে বাংলাদেশ থেকে প্রায় এক লাখ ২২ হাজার হজযাত্রী হজ পালনের জন্য পবিত্র মক্কায় অবস্থান করছেন।
নরসিংদী মিরর/এফএ