ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের অবিনাশী স্মারক দেশের ইতিহাসে প্রথম ও একমাত্র তর্জনী ভাস্কর্য ” মুক্তির ডাক” Call for redemption এর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ৪১ ফুট উচুঁ ভাস্কর্যটি বিশ্বের হাত ভাস্কর্যের মধ্যে উচ্চতায় হবে দ্বিতীয়। ১৩ মাস আগে শুরু করা ঐতিহাসিক এ ভাস্কর্যটির কাজ চলতি মাসেই উন্মুক্ত হওয়ার কথা সর্ব সাধারনের জন্য। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ওপর নরসিংদী শহরের প্রবেশ মুখে সাহে- প্রতাপ মোড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তেজ দীপ্ত তর্জনী নিয়ে নির্মিত ভাস্কর্যটি উন্মোচনের অপেক্ষায় দিন গুনছে ।
ভাস্কর্যটির বেদীর চারপাশে পাশে থাকবে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬৬’র ছয় দফা দাবি, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থ্যান, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ঐতিহাসিক মূহুর্তগুলো টেরাকোটার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। নানা ধরনের অত্যাধুনিক অপটিক্যাল ফাইবার, হোয়াইট সিমেন্ট, পাথরসহ নানা দ্রব্যাদি দিয়ে সৃষ্টি তজর্নিটি। লাইটিং, টাইলস, মার্বেল পাথরের বেদীর ওপরে আছে বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক তর্জনীটি। এমন তর্জনী ভাস্কর্য এই পর্যন্ত বাংলাদেশের কোথাও দৃশ্যমান হয়নি, ইতিমধ্যে মূল ভাস্কর্যটির কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। মূল বেদীর চারপাশে নান্দনিক পানির ফোয়ারা নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও দ্রুত গতিতে ল্যান্ডস্কেপের কাজ চলছে। এর মাঝে তর্জনী ভাস্কর্যটির দেখতে প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী ভিড় জমাচ্ছে এই ঐতিহাসিক শিল্পকর্মটি দেখতে।
বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একই সূত্রে গাঁথা। বাঙ্গালি জাতির অসংবাদিত নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে জাতির উদ্দেশ্যে বজ্রকন্ঠে স্বাধীনতার যে ডাক দিয়েছিলেন সেই বলিষ্ঠ তর্জনীর ইশারায় সেইদিন সমগ্র বাঙালি জাতি জেগে উঠেছিল স্বাধীনতার সংগ্রামের জন্য, একটি তর্জনী প্রতিবাদের ভাষা, একটি তর্জনী অত্যাচারী জালিমদের হুঁশিয়ারি করে দেওয়া, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মূর্ত প্রতীক। একটি তর্জনী, একটি নির্দেশ, একটি যুদ্ধ, একটি জাতির মুক্তি। এই তর্জনী নতুন প্রজন্মের নিকট আর একটি নতুন স্নপ্ন। এই তর্জনী এখনও আমাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে শক্তি যোগায়। আর এই তর্জনী নিয়েই এবার ইতিহাসে সর্বোচ্চ বৃহত্তর বঙ্গবন্ধুর তর্জনী ভাস্কর্য “মুক্তির ডাক “নির্মিত হয়েছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককের ব্যাস্ততম স্হান সাহেপ্রতাপ নামক স্হানে।
এই তর্জনীর নিচে দাঁড়িয়ে গভীরভাবে উপলব্ধি করলে স্বীয় জাতি, ঐতিহ্য আর গৌরবময় সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি নিজের মাঝে ভাসতে বাধ্য। চেতনায় দাড়িঁয়ে যাবে শরীরের পশম এমনটিই বলছেন এটির নির্মাতারা।
এ বিষয়ে ভাস্কর্য নির্মানের উদ্যোক্তা নরসিংদী পৌরসভার মেয়র ও নরসিংদী শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, বাঙালির প্রতি বঙ্গবন্ধুর ছিল অবিচল আস্থা, অগাধ বিশ্বাস আর ভালোবাসা। এ জন্যই তিনি শোষণ, বঞ্চনা ও পরাধীনতার শিকল ভেঙে মুক্তির স্বাদ এনে দিতে পেরেছেন। আঙুলের ইশারায় পুরো জাতিকে এক করে বজ্রকণ্ঠের ঘোষণায় ছিনিয়ে আনলেন স্বাধীনতা। এরপর শুরু করলেন তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ। তাঁর দৃঢ় নেতৃত্ব ও সাহসী পদক্ষেপে অতি অল্প সময়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। জাতির পিতার আদর্শ, দর্শন ও কর্মচিন্তা আমাদের চলার পথের পাথেয়। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নই সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।জাতির পিতার সেই তর্জনী আজো আমাদের শক্তি জোগায়, সাহস জোগায়। নতুন প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার প্রয়াসেই নরসিংদী পৌরসভা থেকে ভাস্কর্যটি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করি বাঙ্গালী জাতির জন্য এ শিল্পকর্মটি একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।
এ ভাস্কর্য নির্মানের শিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান তরুণ প্রজন্মের ভাস্কর অলি মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধু মানেই শক্তি, উৎসাহ আর প্রেরণা। বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। তাঁর অসাধারণ বাগ্মিতা, মানবিকতা, মানুষের প্রতি সহমর্মিতার গুণেই তিনি চির অমলিন। তাঁর ৭ই মার্চের ভাষণ আমাদের শিহরিত করে, অনুপ্রাণিত করে। তাঁর উদার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও শোষণহীন সমাজ গড়ার প্রত্যয় আমাদের উজ্জীবিত করে। বঙ্গবন্ধু বাঙ্গালী জাতিকে ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বজ্রকণ্ঠে স্বাধীনতার যে ইশারা দিয়েছিলেন সেই বিষয়টি নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার প্রয়াসে ৪১ ফুট উচু শিল্পকর্মটির মূল বেদীতে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের গুরত্বপূর্ণ সব বিষয় স্হান পাবে। মূল ভাস্কর্যটি বঙ্গবন্ধুর তেজদৃপ্ত তর্জনীর প্রকাশ পেয়েছে। এই তর্জনীর ইশারায় আমারা পেয়েছি স্বাধীন ভূখন্ড,একটি লাল সবুজের পতাকা। আজ থেকে ১৩ মাস আগে কাজ শুরু করেছিলাম। ইচ্ছে ছিলো মুজিববর্ষের শুরুতেই উদ্ধোধন করার। কিন্তু মাঝখানে মহামারি করোনার কারনে কাজে স্থবিরতা আসে। এখনো সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ কিছু অংশ বাকি আছে। আশা করি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই পুরো কাজ শেষ করে নরসিংদীসহ পুরো দেশবাসীকে নান্দনিক এই ঐতিহাসিক শিল্পকর্মটি উপহার দিতে পারবো । এর আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টারদা সুর্যসেন এর আবক্ষ ভাস্কর্য ,ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ভৈরব এর আগে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের মুরাল বাংলার ঈগল, নরসিংদী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সেবা বৃত্ত, জাগ্রত জাতিসত্তা, লৌহজং উপজেলা কার্যালয়ের সামনে হিমালয়, রায়পুরা কলেজে মহানায়ক নামক শিল্পকর্ম নির্মাণ করে দারুন প্রশংসিত হন এই তরুণ ভাস্কর।
উল্লেখ্য, পৃথিবীর ইতিহাসে হাত নিয়ে যত শিল্পকর্ম হয়েছে উচ্চতার দিক দিয়ে এটি অন্যতম। আর শুধু মাত্র একটি তর্জনীকে প্রতিপাদ্য করে নির্মাণ করা ভাস্কর্যের মধ্যে এটি সবচেয়ে উঁচু ভাস্কর্য বলে দাবি করছেন ভাস্কর অলি মাহমুদ।